পাইথন দিয়ে প্রথম প্রোগ্রাম
পাইথন ব্যবহার করে প্রথম প্রোগ্রাম লেখার আগে আরো কিছু কথা বলা প্রয়োজন। প্রোগ্রামিং শিক্ষার্থীদের একটি বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন হচ্ছে, আমি তো সফটওয়্যার বানাতে চাই (কারণ শিক্ষার্থীদের ধারণা, সফটওয়্যার বলতে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস সমৃদ্ধ সফটওয়্যার বোঝায়), কিন্তু কমান্ড প্রম্পট (command prompt) বা টার্মিনাল (terminal)-এ প্রোগ্রাম লিখে কী লাভ? আসলে গুই (গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস) হচ্ছে প্রোগ্রামিং জগতের খুব ছোট্ট একটি অংশ। এটি শেখার চেয়ে প্রোগ্রামিং ভাষা ও লজিক শেখা ও চর্চা করাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গান শেখার আগেই যেমন সঙ্গীতশিল্পীরা অ্যালবাম বের করে না, বরং কয়েকবছর গান শিখে, চর্চা করে, তারপরেই ওই কাজে হাত দেয়, সফটওয়্যার তৈরির ব্যাপারটিও তেমনি। আমরা পূর্ণাঙ্গ সফটওয়্যার অবশ্যই বানাবো, তবে সেটি ভালোভাবে প্রোগ্রামিং শেখার পরে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, প্রোগ্রামিং শেখার সময় সবকিছুতেই প্রশ্ন : “কেন”? (এটি কেন হয়, সেটি কেন হয় – এরকম আর কি)। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে প্রোগ্রামিং শেখার শুরুর দিকে “কী হয়” সেদিকেই বেশি জোর দেওয়া। কোন কাজ করলে কী হয় এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য নিজেই প্রোগ্রাম লিখে পরীক্ষা করে দেখা। প্রোগ্রামিং মোটামুটি শেখা হলে, তারপর বিভিন্ন “কেন” প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাবে। শুরুতেই “কেন” নিয়ে অস্থির থাকলে প্রোগ্রামিংটা আর শেখা হবে না।
এখন আমরা আমাদের প্রথম প্রোগ্রাম লিখবো। সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের প্রোগ্রামটিও হবে একটি ছোট্ট প্রোগ্রাম, যা Hello World কথাটি স্ক্রিনে প্রিন্ট করবে। এটি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত একটি রীতি আর কি। যাদের কম্পিউটারে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম আছে, তারা পাইথন সফটওয়্যারটি চালু করবে আর যারা লিনাক্স বা ম্যাক ব্যবহারকারী, তারা টার্মিনাল চালু করবে এবং সেখানে python লিখে এন্টার কী চাপবে। তাহলে পাইথন ইন্টারপ্রেটার চালু হবে। সেখানে পাইথন ভাষায় লেখা যেকোনো নির্দেশ বা কমান্ড সঙ্গে সঙ্গে রান করে আউপুট দেখা যাবে। আমরা লিখব – print(“Hello World”)। এর মাধ্যমে আমরা কম্পিউটারকে বলছি যে স্ক্রিনে Hello World লেখাটি দেখাতে।
>>> print("Hello World")
Hello World!
>>>
তাহলে আমরা আমাদের প্রথম প্রোগ্রাম লিখে ফেললাম! পাঠককে অভিনন্দন, কারণ প্রোগ্রামিং শেখার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আমরা পার করলাম।
এখন আমরা এই কাজটিই আবার করবো, তবে ভিন্নভাবে। আমরা প্রোগ্রামটি একটি ফাইলে সেভ করবো। তারপরে সেই ফাইলটি পাইথন ব্যবহার করে চালাবো। এজন্য যেকোনো টেক্সট এডিটরে পাইথন কোড লিখে ফাইলে সেভ করতে হবে আর ফাইলের এক্সটেনশন দিতে হবে .py। যেমন আমরা hello.py নামে একটি ফাইল তৈরি করবো, যেখানে কেবল নিচের কমান্ডটি লেখা থাকবে :
print("Hello World")
তারপরে ফাইলটি সেভ করতে হবে।
এখন আমরা টার্মিনালে গিয়ে python hello.py কমান্ড দিলে প্রোগ্রামটি রান হবে, আর আউটপুট দেখা যাবে : Hello World।
তাহলে আমরা এতক্ষণে শিখে ফেললাম কিভাবে পাইথন ইন্টারপ্রেটার ব্যবহার করে প্রোগ্রাম লিখতে হয়, আবার কিভাবে আলাদা ফাইলে পাইথন প্রোগ্রাম লিখে সেটি চালাতে হয়।
প্রতিটি ভাষার যেমন কিছু নিয়মকানুন রয়েছে, তেমনি প্রোগ্রামিং ভাষারও নিয়মকানুন রয়েছে। আমরা যখন প্রোগ্রাম লিখে রান করতে যাই, তখন যেই ভাষায় প্রোগ্রাম লেখা হয়েছে, তার নিয়মকানুন পরীক্ষা করা হয় এবং কোনো ভুল পাওয়া গেলে প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে সেই ভুলের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। এখন আমরা একটি ভুল করে দেখবো যে ভুল করলে কী হয়। পূর্বে তৈরি করা hello.py ফাইলে আমরা Hello World এর শুরুতে এবং শেষে ডবল কোটেশন চিহ্ন ব্যবহার করেছি। কেন করেছি, সেই আলোচনা পরে করবো, তবে এখন দেখবো যে শুরুতে ডবল কোটেশন চিহ্ন এবং শেষে সিঙ্গেল কোটেশন চিহ্ন ব্যবহার করলে কী হয়? এজন্য আমরা সেই ফাইলে শেষ ডবল কোটশন চিহ্নটি পরিবর্তন করে সিঙ্গেল কোটেশন চিহ্ন ব্যবহার করবো :
print("Hello World')
এখন ফাইলটি সেভ করে প্রোগ্রাম রান করার চেষ্টা করলে নিচের মতো আউটপুট আসবে :
File "hello.py", line 1
print("Hello World')
^
SyntaxError: EOL while scanning string literal
পাইথন আমাদের বলছে যে, প্রোগ্রামে সিনট্যাক্স এরর হয়েছে, সেই সঙ্গে কোথায় ভুল হয়েছে, সেটিও দেখিয়ে দিলো। সঙ্গে আবার একটি এরর মেসেজও দিল, যদিও আমরা এখন সেটি ভালোভাবে বুঝতে পারছি না। যাই হোক, এরকম (এবং আরো অনেকরকম) ভুল আমাদের প্রায়ই হবে, তবে তাতে ভয় পেলে চলবে না। ভুলগুলো ঠিকঠাক করে প্রোগ্রাম আবার চালাতে হবে।